
মো. আব্দুল মান্নান :
ময়মনসিংহের ফুলপুর মহিলা কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ তাফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে উপাধ্যক্ষ মুহাম্মাদ শফীকুল ইসলামসহ ৮ জন সহকারী অধ্যাপক, ৭ জন প্রভাষক, ২ জন সহকারী মৌলভী, ৬ জন সিনিয়র শিক্ষক, ১ জন সহকারী শিক্ষক, ১ জন ইবি প্রধান, ১ জন জুনিয়র শিক্ষক, ১ জন জুনিয়র মৌলভী, ১ জন ইবি ক্বারী, ৩ জন অফিস সহকারী, ১ জন ল্যাব সহকারী, ৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত ৪ জন শিক্ষকসহ মোট ৪১ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ও কর্মচারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছুটিতে থাকায় উনার সাথে মোবাইলে কথা বলে উনার অফিস সহকারী হাবিবুল আলমের নিকট অভিযোগপত্রটি হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসরিন আক্তার ও একাডেমিক সুপার ভাইজার পরিতোষ সূত্র ধরের নিকটও অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করা হয়।

অভিযোগে প্রকাশ, অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ তাফাজ্জল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন দুর্নীতি করে আসছেন। তার নিকট মাদরাসা লক্ষ লক্ষ টাকা পাবে বলে অডিট কমিটির এক রিপোর্টে জানা যায়। জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিকালে মাদরাসা ছুটির পূর্ব মুহূর্তে অফিস সহকারী মো: নূরুল ইসলাম ও উপাধ্যক্ষ মুহাম্মদ শফীকুল ইসলামের সাথে দুর্ব্যবহার, গালিগালাজ ও কথা কাটাকাটি করেন অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ তাফাজ্জল হোসেন। এক পর্যায়ে অফিস সহকারী মো: নূরুল ইসলামকে গলা ধাক্কা দিয়ে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন তিনি। এছাড়া অফিস সহকারী রাজিয়া বেগমকে ছুটির পরও তিনি এক ঘন্টা আটকে রাখেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষক কর্মচারীদেরকে বিভিন্ন সময় মানসিকভাবে তিনি নির্যাতন করে থাকেন বলে অভিযোগ করে মো. জাকির হাসান নামে একজন প্রভাষক বলেন, ইসলাম আত্মহত্যাকে সমর্থন করে না।

তানাহলে অধ্যক্ষ কর্তৃক নির্যাতনের কারণে তিনি আত্মহত্যা করতেন। এছাড়াও কার্যকরী কমিটির সহসভাপতি হুমায়ুন কবির লিটনসহ প্রত্যেক শিক্ষক কর্মচারীর পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে ৪১ জন শিক্ষক কর্মচারী অভিযোগ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে উপস্থিত হন। ফুলপুর সরকারি কলেজ সংলগ্ন মহিলা কামিল মাদরাসা থেকে বের হয়ে কলেজ রোড, আমুয়াকান্দা ব্রিজ, বাসস্ট্যান্ড ও গোল চত্বর হয়ে ৪১ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ও কর্মচারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যাওয়ার সময় বিষয়টি পথচারীদের নজর কাড়ে।

একজন শিক্ষিকা এ প্রতিবেদককে বলেন, উনার দুর্ব্যবহারে ছাত্রীরাও ক্ষুব্ধ। তারাও তাদের অভিযোগ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আসতে চেয়েছিল। কিন্তু আসতে দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলপুর মহিলা কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ তাফাজ্জল হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি কেমন মানুষ তা সবাই জানে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ. বি. এম. আরিফুল ইসলাম অভিযোগকারী শিক্ষক শিক্ষিকা ও কর্মচারীদের বলেন, আপনারা শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যান। শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেয়ে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসরিন আক্তার ও একাডেমিক সুপার ভাইজার পরিতোষ সূত্র ধরও একই কথা বলেন। তারা বলেন, ইউএনও স্যার যেভাবে বলেছেন সেভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যান। আর শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন এখতিয়ার আমাদের নেই। এ বিষয়ে আপনারা থানার স্মরণাপন্ন হতে পারেন। বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ. বি. এম. আরিফুল ইসলামের নিকট তদন্ত কমিটি গঠন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটু অসুস্থ। অফিসে ফিরেই এ বিষয়ে একটি স্ট্রং কমিটি গঠন করে দিব। এরপর আশা করছি, খুব শীঘ্রই বিষয়টি সূরাহা হবে।