আজ
|| ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
ময়মনসিংহেও দুর্নীতি আছে, দুর্নীতিবাজরা সাবধান হোন —- সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিক
প্রকাশের তারিখঃ ৮ জুলাই, ২০২৪
মোঃ আব্দুল মান্নান :
বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক কল্যাণ ইউনিয়ন (বসকো) --এর সভাপতি ও দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক বলেছেন,
'ময়মনসিংহেও দুর্নীতি আছে। দুর্নীতিবাজরা সাবধান হোন। দুর্নীতির কারণে আপনাদের প্রতি ঘৃণা আসে।'
সাংবাদিকদের নিয়ে ছাগল কাণ্ডের আলোচিত দূর্নীতিবাজ এনবিআরের (রাজস্ব বোর্ডের) কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকীর উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে, বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রবিবার (৭ জুলাই) সকাল ১১টায় ময়মনসিংহ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ময়মনসিংহের আমলা পাড়া যেন বেগম পাড়ায় পরিণত হয়েছে। আমলা পাড়ায় গিয়ে দেখবেন, ১২ তলা, ১০ তলা, ৮ তলা উঁচু উঁচু বিলাসবহুল বিল্ডিং। বলেন তো এগুলো কারা নির্মাণ করেছেন? এগুলো কি শিল্পপতিরা করেছেন ? ব্যবসায়ীরা করেছেন? ময়মনসিংহ শহরে আমাকে দেখান তো কোন ব্যবসায়ী ২০ কোটি টাকা খরচ করে ১২ তলা বিল্ডিং করেছেন? আমার চোখে পড়ে না। এখানে আমার সিনিয়ররা আছেন বলুন, দেখান। কোন ছাত্র নেতা করেছেন ১২ তলা বিল্ডিং? দেখান, কোন এমপি করেছেন একটা ১২ তলা বিল্ডিং?
করেছেন কেরাণীরা। ময়মনসিংহের ২০-২৫ জন কেরাণী গিয়ে দেখেন আমলা পাড়ায় কি আলীশান ভবন করেছেন! ১০-১২ জন মিলে ২০ কোটি, ২৫ কোটি, ৩০ কোটি টাকা খরচ করে বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন তারা। তাদের বেতন কত? পরিবারের জন্য খরচ বাদে প্রতি মাসে আয় থাকে কত? কিভাবে তারা এতবড় বিল্ডিং করছেন? আমার মাথা ঘুরান মারছে বিল্ডিং দেখে। আমি মনে করছিলাম, এই বিল্ডিং মনে হয় কোন শিল্পপতি করেছেন, কিন্তু না। খোঁজ নিয়ে দেখি, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কেরাণী, অফিস সহকারী, তিনি কিনেছেন ফ্ল্যাট!

যুব উন্নয়ন অফিসেও একই অবস্থা। ময়মনসিংহ যুব উন্নয়নের ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের জন্য ১০ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। টাকাগুলো কেন দিয়েছিলেন? বেকার যুবক যুবতীদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে ও তাদেরকে উদ্যোক্তা বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে না কিছু অসাধু লোভী কর্মকর্তার কারণে। এই যে টাকাগুলো দেওয়া হয়েছে, ভূয়া প্রশিক্ষণার্থী বানিয়ে এগুলো মেরে দেওয়া হয়েছে। যারা যোগ্য শিক্ষার্থী, মেধাবী, যারা কর্মঠ, যারা প্রাপ্য তাদেরকে প্রশিক্ষণ না করিয়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ভূয়া প্রশিক্ষণার্থী দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন।
আপনারা জানেন, জনস্বার্থে এসব টাকা উদ্ধারের জন্য ২০২২ সালে ডিসি অফিসে আমি একটি পিটিশন দাখিল করেছিলাম। ওই পিটিশনের প্রেক্ষিতে আদালত বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন এটি বছরের পর বছর তদন্ত করছেন। আজও তদন্ত করছেন কিন্তু এর কোন ফলাফল আমরা পাইনি। ময়মনসিংহের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আপনারা দয়া করে দেখবেন সরকারের এই টাকাগুলো কোথায় আছে? কার কাছে আছে? দ্রুত তদন্ত করে টাকাগুলো উদ্ধার করা হোক।
আরেকটি আলোচিত বিষয় হলো, যুব উন্নয়নের সামান্য একজন সহকারী কর্মকর্তা মুক্তাগাছার শাহীন আলম। তিনি ও তার সহযোগীদের নিয়ে আমলা পাড়ায় ৮০ কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল আলীশান ভবন নির্মাণ করেছেন। একটি দুটি নয় বরং ৪টি বিল্ডিং তারা করেছেন। আমরা বলতে চাই, এসব দুর্নীতিবাজদের রেহাই নাই। হিসাব দিতে হবে। এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে এই মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে এসব দুর্নীতিবাজদের প্রতি ঘৃণা জানাচ্ছি আর সতর্ক করছি, আপনারা সাবধান হোন।
আরেকটি বিষয় হলো, আপনারা সবাই জানেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ড্রাইভাররা পাখির মত মানুষ মারছে। মানুষের জানের কোন নিরাপত্তা নেই। ৭-৮ বছর আগে ত্রিশালের ইউএনও এই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। কত ভালো একজন কর্মকর্তা ছিলেন! এভাবে শুধু সরকারি কর্মকর্তা নয় পাখির মত সাধারণ মানুষকে মারা হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঢাকা থেকে ৮৮ কিলোমিটার ও ময়মনসিংহ থেকে ৪০ কিলোমিটার অর্থাৎ ত্রিশাল ও ভালুকার কাছাকাছি জায়গায় এভাবে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন। এটি বন্ধের জন্য কারো কোন পদক্ষেপ নেই। এ নিয়ে কারো কোন চিন্তা নেই। চিন্তা হলো শুধু সাংবাদিকদের। তারা যখন অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেন তখন কিছু লোক এ নিয়ে সমালোচনা করেন। বলেন যে, এরা বেশি বুঝে। নিশ্চয়ই এখানে তাদের কোন স্বার্থ আছে। জনস্বার্থমূলক এসব নিউজ দুই চারজন গোয়েন্দা সংস্থার ও প্রশাসনের লোক ব্যতীত অন্যরা পড়েন না। লোকাল পত্রিকাকে মূল্যায়ন করা হয় না। অথচ লোকাল পত্রিকাতেই এসব নিউজ সবিস্তার ছাপা হয়। সমালোচনা করার সময় পেলেও এসব নিউজ পড়ার সময় তারা পান না। তাহলে সাংবাদিকদের মূল্যায়ন তারা কিভাবে করবেন?
আরেকটি বিষয়, ভালুকার পর সিড স্টোর বাজার সংলগ্ন স্থানে সরকারি জায়গা লীজ না নিয়ে ২০১৫ সনে রশিদ ফিলিং স্টেশন নামে একটি ফিলিং স্টেশন করা হয়েছে। এই একই ব্যক্তি ত্রিশালের বাগান নামক এলাকায় আরেকটি ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করেছেন। এসব ফিলিং স্টেশনে যখন গাড়ি ঘুরায় তখন প্রায়ই চলতি গাড়িগুলোকে মেরে দেয় এবং এভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব জায়গায় পাখির মত মানুষ মারা হলেও এর কোন প্রতিকার নেওয়া হচ্ছে না। সড়ক ও জনপথ বিভাগ নামেমাত্র উচ্ছেদ অভিযানের চিঠি ইস্যু করলেও কাউকে উচ্ছেদ করা হয় না। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ২০১৫ সন থেকে এ পর্যন্ত কয়টা উচ্ছেদ হয়েছে জাতি জানতে চায়। এদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে উচ্ছেদ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১ লেনের সড়ককে ৪ লেন করেছেন। সম্প্রতি এটাকে ১০ লেন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর ৬ লেনের মধ্যে রয়েছে বহু ফিলিং স্টেশন। তারা সরকারি জায়গা ব্যবহার করে ফিলিং স্টেশন চালালেও সরকারকে দিচ্ছেন না কোন ট্যাক্স। কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স বা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। এক রশিদ সাহেবই প্রায় ৫-৬ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। এ টাকাগুলো আদায় করতে পারলে দেশের উন্নয়ন হতো। কিন্তু এখান থেকে কিছু ভাগ নেওয়ার জন্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা তাল বাহানা করছেন। এভাবে দেশকে ঠকানো হচ্ছে।
ত্রিশালে গত ৩ মাসে ৩৭ জন মানুষ মারা গেছেন। সিএনজি, ট্রাক ও বাস এক্সিডেন্টে মারা গেছেন তারা। সকালে মারা যায়, বিকালে জানাজা। এই তো শেষ। কিন্তু লোকটি কি কারণে মারা গেলেন? কিভাবে মারা গেলেন? তার বাচ্চা কয়জন? পরিবারে লোক কয়জন? তারা কিভাবে চলছেন? এসব খবর আমরা লই না। এসব খবর কে লয়? পরিশ্রমী সাংবাদিকরা লন। তারা ঘুরে ঘুরে এসব নিউজ করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা এসব অসহায়দের পাশে দাঁড়াবেন তো দূরের কথা সাংবাদিকদের ওই নিউজগুলো পড়ারই সময় তাদের নেই। হায়রে আমাদের কর্মকর্তা! এই যে অবহেলা! এই যে দুর্নীতি করছেন! এতে আবারও মানুষ মারা যাবে। এগুলো বন্ধ হবে না। এর জবাব দিতে হবে। দুর্নীতিবাজরা সাবধান হোন।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিনের সম্পাদক ড. ইদ্রিস খান, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফুলপুর প্রতিনিধি দৈনিক বাংলাদেশ নিউজ অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক মোঃ আব্দুল মান্নান, দৈনিক শাশ্বত বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আজগর হোসেন রবিন, দৈনিক ভোরের অপেক্ষা পত্রিকার সম্পাদক শফিকুল বাশার, দুর্নীতি বার্তা পত্রিকার সম্পাদক খায়রুল ইসলাম আল আমিন, নবজাগরণ টিভির সাংবাদিক সোহানুর রহমান সোহান, অলটাইম ক্রাইম নিউজের সাংবাদিক বিল্লাল হোসেন মানিক, দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার ময়মনসিংহ প্রতিনিধি রেজাউল করিম রেজা, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া পলাশ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার সাংবাদিক মাজহারুল হক, ক্রাইম রিপোর্টার রাকিবুল হাসান আহাদ খান, প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গফরগাঁও প্রতিনিধি আব্দুল হালিম সরদার প্রমুখ।
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশ নিউজ. All rights reserved.