আজ
|| ১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
ওজনে কম দেওয়ার কারণেই শুয়াইব (আ.)-এর জাতির উপর আসমানী গজব নাযিল হয়েছিল
প্রকাশের তারিখঃ ১০ জুন, ২০২৪
অনলাইন ডেস্ক :
ব্যবসায়-বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে পরিমাণ এবং ওজনে কমবেশি করা কিংবা ঠকানোর মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন একটি জঘন্য অপরাধ। মানুষ মাত্রাতিরিক্ত লোভ ও অল্পে তুষ্ট না হওয়ার কারণেই অবৈধ পন্থায় উপার্জনের পেছনে ছুটে থাকে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ ধরনের কাজকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, নিন্দনীয় ও পরকালীন দুর্ভোগের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, আর যখন তাদের মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।’ সুরা মুতাফফিফীন : ১-৩
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘মাপার সময় পুরো মাপবে এবং সঠিক পাল্লা দিয়ে ওজন করবে।’ সুরা ইসরা : ৩৫
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওজনে বাড়াবাড়ি কর না, ঠিক ঠিকভাবে ইনসাফের সঙ্গে ওজন কর এবং পাল্লায় কম করে দিয়ো না।’ সুরা আর রাহমান : ৮-৯
ইবনে মাজাহ শরিফে বর্ণিত এক হাদিসে নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে জাতিই মাপ ও ওজনে কম দেবে, সে জাতিই দুর্ভিক্ষ, কঠিন খাদ্য-সংকট এবং শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হবে।’
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখন বাজারে যেতেন, তখন বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস শুনিয়ে বলতেন, ‘আল্লাহকে ভয় করো। কেননা, মাপে কমদানকারীরা কিয়ামতের দিন দাঁড়িয়ে থাকবে এমন অবস্থায় যে, ঘামে তাদের কানের অর্ধেক পর্যন্ত ডুবে যাবে।’ সহিহ্ বোখারি ও মুসলিম
মাপে কম দেওয়ার কারণে অতীতে অনেক জনগোষ্ঠীকে আল্লাহতায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছেন। হজরত শোয়াইব (আ.)-এর জাতির কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কোরআনে কারিমের সুরা আরাফে এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে এসেছে।
আল্লাহর নবী হজরত শোয়াইব (আ.)-এর সম্প্রদায়ের লোকেরা লোভ-লালসায় মত্ত হয়ে পারস্পরিক লেনদেনের সময় ওজনে কম দিয়ে মানুষের অধিকার নষ্ট করত। ওই সময় দুর্নীতি, রাহাজানি, ছিনতাই, ধর্ষণ ও মজুদদারির মতো জঘন্য অন্যায় কাজ তাদের সমাজের মধ্যে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল।
হজরত শোয়াইব (আ.) তাদের এগুলো থেকে ফিরিয়ে আনার অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারা তার দাওয়াতে সাড়া দেয়নি। বরং তাদের সীমালঙ্ঘন বেড়েই চলছিল। একসময় তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসে। কয়েক দিন তাদের অঞ্চলে প্রচণ্ড গরম পড়ল। গরমে তারা ছটফট করতে লাগল। এরপর কাছাকাছি একটা ময়দানের ওপর গাঢ় মেঘমালা দেখা দিল। ময়দানে মেঘের ছায়া পড়ল। শীতল বাতাস বইতে লাগল। এলাকার সবাই ওই ময়দানে উপস্থিত হলো। বলতে লাগল, এই মেঘ থেকে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। কিন্তু তাদের ওপর অগ্নিবৃষ্টি শুরু হলো। আর নিচের দিকে শুরু হলো প্রচণ্ড ভূমিকম্প। ফলে সবাই সেখানে ধ্বংস হয়ে গেল।
সুতরাং মানুষের হক নষ্ট করা যে কতটা মারাত্মক বিষয় তা হজরত শোয়াইব (আ.)-এর জাতির ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। তাই প্রতিটি ব্যবসায়ীর উচিত সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করা। মানসম্মত ত্রুটিমুক্ত পণ্য সরবরাহ করা। কোনোভাবেই যেন ওজনে কম চলে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখা। মানুষের হক নষ্ট না করা। লোভের বশবর্তী হয়ে ওজনে কম দেওয়ার মতো অপরাধে জড়িত না হওয়া।
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশ নিউজ. All rights reserved.