আজ
|| ১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
মুফতী হলেন হাফেজ মফিদুলের তত্ত্বাবধানে গড়া ছাত্র ফুলপুরের আল আমীন সরকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪
মো. আব্দুল মান্নান
হাফেজ মাওলানা মুফতী হলেন হাফেজ ক্বারী মফিদুল ইসলাম তালুকদারের তত্ত্বাবধানে গড়া ছাত্র আল আমীন সরকার। সোমবার (২২ জানুয়ারি ২০২৪) জামিয়া মাদানিয়া হামিউস সুন্নাহ, লালবাগ, ঢাকা থেকে তিনি ইফতা সম্পন্ন করে মুফতী হন। এর আগে ২০১১ সনে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ২নং রামভদ্রপুর ইউনিয়নের চর বাহাদুরপুর কান্দাপাড়া মোহাম্মাদিয়া মাদরাসা জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব হাফেজ ক্বারী মফিদুল ইসলাম তালুকদারের মধ্যস্ততায় গড়া মাদরাসা থেকে তিনি নাজেরা শেষ করেন এবং ৩০ নং পারা তিনি হাফেজ মফিদুলের নিকট থেকে হিফজ করেন। তারপর ২০১৪ সনে শুকতগ্রাম নূরানী ও হাফিজিয়া মাদরাসা, কালিয়া নড়াইল থেকে হিফজ সম্পন্ন করেছেন। এসময় হাফেজ নূর ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। হিফজ সম্পন্ন করার পর তিনি কিতাব বিভাগে ভর্তি হয়ে উর্দু কায়দা থেকে শরহে বেকায়া পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে মেধার প্রমাণ রেখেছেন। এসব ক্লাসে তিনি মুমতাজ হয়েছেন। আর জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া, লালবাগ, ঢাকা থেকে তিনি দারুল হাদীস সম্পন্ন করেন। তখন মাওলানা আব্দুল হাই ও মুফতী মুহিব্বুল্লাহসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। নাজেরাতে তিনি মুমতাজ হয়েছেন। এছাড়া হিফজে মুমতাজ, দারুল হাদীসে জায়্যিদ জিদ্দান ও ইফতার রেজাল্টে গৌরবের সাথে জায়্যিদ জিদ্দান অর্জনসহ ইফতা সম্পন্ন করেন মুফতী আল আমীন সরকার।
মুফতী আল আমীন সরকার নয়াপাড়া গ্রামের গর্বিত পিতামাতা হাফিজ উদ্দিন ও শুক্কুরী খাতুনের পুত্র। আর তার ছোট বেলার উস্তাদ ও শিক্ষা জীবনের তত্ত্বাবধায়ক হাফেজ ক্বারী মফিদুল ইসলাম তালুকদার তার পাশের গ্রাম চরআশাবট বড়বাড়ির কৃতি সন্তান ও বর্তমানে মালয়েশিয়ার কোতা এমারেল্ড রাওয়ান সেলাঙ্গার -এর ইমাম ও খতীব। তিনি যখন তার পাশের গ্রাম অর্থাৎ চর বাহাদুরপুর কান্দাপাড়া গ্রামের নূরুল হক নামের একজন দাতার মাধ্যমে একটি মসজিদ ও মাদরাসা গড়ে তুলেছিলেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও মসজিদে ইমামতি করতেন তখন এ আল আমীনের সাথে তার পরিচয় ঘটে। ছোট্ট আল আমীনকে দেখে বিচক্ষণ মফিদুল ইসলাম তালুকদার আঁচ করতে পেরেছিলেন যে, আল আমীন একদিন অনেক বড় হবে। এর পেছনে শ্রম দেওয়া দরকার। এর পেছনে শ্রম দিলে বা এর যত্ন নিলে তা বৃথা যাবে না। কাজে লাগবে। এরকম ভেবে আল্লাহর ওয়াস্তে আল্লাহকে রাজি খুশি করার লক্ষ্যে আল আমীন সরকারের যত্ন নেওয়া শুরু করেন হাফেজ ক্বারী মফিদুল ইসলাম তালুকদার। প্রায়ই তিনি ফোন দিতেন। তার খানা খরচ, কাপড় চোপড় ও আনুষাঙ্গিক যা লাগতো সবই দিতেন মফিদুল। আল আমীন সরকারকে ইফতার সনদ দেন মুফতী মুহিব্বুল্লাহ ও মুফতী মঞ্জরুল ইসলাম আফেন্দি প্রমুখ। এ খবর পেয়ে খুশিতে কান্না শুরু করেন হাফেজ ক্বারী মফিদুল ইসলাম তালুকদার। তিনি মালয়েশিয়া থেকে মোবাইলে এ প্রতিবেদককে বলেন, হুজুর, আমার মেহনত সার্থক হয়েছে। আমার মনের আশা পূর্ণ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। আমার আল আমীন মুফতী হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ। এসব বলে বলে তিনি কান্না করছিলেন।
এ প্রতিবেদকও যতটুকু খোঁজ খবর নিয়েছেন তাতে মনে হয়েছে সত্যিই আল আমীন একজন খাঁটি নায়েবে রাসূল হয়েছেন। অবশ্য মুফতী আল আমীন সরকারকে এ তবকায় পৌঁছতে প্রচুর শ্রম ঘাম ঝরাতে হয়েছে। কুরবানী করতে হয়েছে। জানা যায়, ২০২০ সনে করোনার সময় মাদরাসা যখন বন্ধ ছিল তখন হয়তো টাকা পয়সার ক্রাইসিসের কারণে হাফেজ ক্বারী মফিদুল ইসলাম তালুকদারকেও না জানিয়ে একটি প্লাস্টিক কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন আল আমীন। সেখানে মাত্র ১৫/২০ দিন কাজ করার পর মেশিনের চাপায় পড়ে তার ডান হাতে মারাত্মক আঘাত পান। হাতটা কেটে যায় তার। তারপরও লেখাপড়া থেকে পিছপা হননি আল আমীন। কঠোর পরিশ্রম করে এগিয়ে গেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার ইলম ও আমলের মধ্যে বরকত দান করুক। তাকে নেক হায়াত দান করুক। আজীবন ইলমে দীনের খেদমতে ব্যপৃত রাখুক। আল আমীন সরকার যেন তার মা-বাবার পাশাপাশি তার ছোটবেলার উস্তাদ ও তত্ত্বাবধায়ক হাফেজ ক্বারী মফিদুল ইসলাম তালুকদারেরও নাজাতের উসীলা হন। সেই রকম সুন্দর আমল আল্লাহ তায়ালা আল আমীন সরকারকে করবার তাওফীক দান করুক। সকলের নিকট তার জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো।
* সাদা টুপি পরা মুফতী আল আমীন সরকার আর পাগড়ী পরা হাফেজ ক্বারী মফিদুল ইসলাম তালুকদার।
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশ নিউজ. All rights reserved.