
মো. আব্দুল মান্নান :
ময়মনসিংহের তারাকান্দা ফজলুল হক চৌধুরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হোসেন আলী চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ, ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
তিনি কলেজের জায়গা বিক্রিসহ সেই কলেজে নির্মিত বিল্ডিং নিলামে তোলার পাঁয়তারা করছেন বলেও জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে জাল নিয়োগ ও সার্টিফিকেট জালিয়াতিরও অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’ থেকে অনার্স ও মাস্টার্সের সার্টিফিকেট এনে এমপিওভুক্ত হয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে। অথচ সরকার ওই প্রতিষ্ঠানকে ২০২৩ সালের দিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তার দুর্নীতি সম্বন্ধে জানতে চাইলে ওই কলেজের পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের প্রভাষক দাবিদার মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, আমাকে এমপিওভুক্ত না করার কারণে ২০২২ সালে আমি এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে হাইর্কোটে মামলা দায়ের করেছিলাম। আমার এই পদে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগে বিধি মোতাবেক কোনো নিয়োগ দান করা বা বেতন চালু করার কোন সুযোগ নেই। এদিকে, কোর্ট কর্তৃক তদন্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ময়মনসিংহ -এর পরিচালক মোঃ আজাহারুল ইসলাম ও এডি মোঃ মোজাম্মেল হক আমাকে এ কলেজের কর্মরত শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ করে ডিজিতে পাঠান। ডিজি অফিসের সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) তপন কুমার দাসের নিকট আমাকে এমপিওভুক্ত করার দায়িত্ব ছিল কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিনি আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে এবং আমার নিয়োগ ভিত্তিহীন বলে আমার স্থলে সরস্বতী রানী মোদককে এমপিও প্রদান করেন।
পরবর্তীতে আমি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ডিজি, কলেজ অধ্যক্ষ হোসেন আলী চৌধুরী ও সরস্বতী রানী মোদকের বিরুব্দে মামলা করি।
তাছাড়াও তিনি যেসব বিষয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন, সেসব বিষয় মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষায় অনুমোদনে যথেষ্ট অনিয়ম রয়েছে বলে জানা গেছে। এসকল শিক্ষকদের এমপিও করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। জানা যায়, সুশান্ত কুমার পাল এ কলেজে গ্রন্থাগারিক ছিলেন। এখন তিনি প্রভাষক। কিন্তু কিভাবে তিনি প্রভাষক হলেন? তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আবার অধ্যক্ষের স্ত্রী খাতুনে জান্নাত লিজাকে প্রথমে কেরানী পদে এমপিও করানো হয়। তিনি এখন প্রভাষক (আরবি)। এমনিভাবে অন্যদেরও বিষয়ভিত্তিক সনদ না থাকলেও এমপিওর জন্য আবেদন করেছেন।
জানা যায়, ১. আব্দুস সালাম, প্রভাষক – গৃহব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন, ইন্ডেক্স-N56909904 ২. স্বর্ণা জাহান, প্রভাষক -বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প, ইন্ডেক্স- N 56909896
৩. সুশান্ত কুমার, প্রভাষক -খাদ্য ও পুষ্টি, ইন্ডেক্স-N56908822 ও ৪. আতিকুর রহমান, প্রভাষক -সংগিত, ইন্ডেক্স-N56910011 এই ৪ জন অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। এছাড়া অধ্যক্ষের সহধর্মিণী খাতুনে জান্নাতকে, প্রভাষক -আরবি বিষয়ে নিয়োগ দেখানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, পার্শ্ববর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট বনপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এ ধরনের দুর্নীতির কারণে সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং বর্তমানে তিনি জেলে রয়েছেন।
ফজলুল হক চৌধুরী মহিলা কলেজের জায়গা জমি বিষয়েও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তার দেওয়া পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি মারফত প্রমাণিত যে, অত্র কলেজের ১.৮০ একর (এক একর আশি শতাংশ) জমি রয়েছে। কিন্তু ৩৮ শতাংশ জমির উপর বর্তমান নতুন ক্যাম্পাস অবস্থিত। বাকি ১.৪২ একর জমি তিনি ভোগ দখল করে খাচ্ছেন। সরজমিনে তদন্ত করলে ৩৮ শতাংশ জমি ছাড়া আর কোনো জমি পাওয়া যাবে না। বিগত ফ্যাসিস্ট ‘আওয়ামী লীগ’ সরকারের আমলে ময়মনসিংহ জেলা শাখার ‘সহদপ্তর সম্পাদক’ পদে থেকে দলীয় ক্ষমতা বলে তিনি এসব দুর্নীতি করেছেন। তার বিরুদ্ধে যে কেউ কোন কথা বললে তাকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের হুমকি-ধমকি দিয়ে দৌড়ের ওপর রাখেন তিনি।
তার দূর্নীতির কারণে এবং কলেজের আয়-ব্যয়সহ একাউন্টের টাকা তছরুপ করার কারণে ২০১৯ সালে তারাকান্দা উপজেলা প্রশাসন গণশুনানি ডাকে। তখন তার বিরুদ্ধে শিক্ষক-স্টাফ হয়রানি/নির্যাতনসহ ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলে। ভবিষ্যতে তিনি আর কোন রকম অন্যায় – দুর্নীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে আসেন। কিন্তু এখনো তিনি আগের ধারা অব্যাহত রেখে চলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের আয়ের কোন অংশ শিক্ষক-কর্মচারীদের তিনি দিতে চান না। একাউন্টের সমস্ত টাকা তার নিয়ন্ত্রণে। এ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীরা অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ বিষয়ে মোবাইলে অধ্যক্ষের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগকারী আনিসুর রহমান হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। পরে ওই মামলার তদন্তভার পড়েছিল ডিজি মহোদয়ের কাছে। পরে ডিজি মহোদয় তার কাগজপত্র ঠিক না পাওয়ায় তাকে বাতিল করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী আনিসুর রহমান বলেন, আমার বৈধ কাগজপত্র থাকাসত্ত্বেও ডিজি মহোদয় আমার নিয়োগ ও যোগদান ভিত্তিহীন দাবি করে দুর্নীতিবাজ এ অধ্যক্ষের প্রতারণায় পড়ে কৌশলে আমার বৈধ কাগজপত্র নেই বুঝিয়ে ও আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে। পরে আমি ওই ডিজিসহ তাদের নামে মামলা করেছি, যা এখনো চলমান।