মো. আব্দুল মান্নান :
ময়মনসিংহের ফুলপুরে শিক্ষক হাজিরা খাতায় নাম অবনমন করায় সম্মান ও মর্যাদা হানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ফুলপুর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ্। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম সীমার নিকট লিখিতভাবে তিনি এ অভিযোগ করেন। এরপর প্রায় ১৫ দিন অতিক্রান্ত হলেও বিষয়টি আজও সুরাহা হয়নি।
জানা যায়, মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ্ ২০০৮ সনের ১০ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ধোপামুড়ি গ্রামের মোহাম্মদ ফজলুল হকের পুত্র। জানা যায়, চাকুরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল কামিল পাশ। তিনি ঢাকার তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে প্রথম শ্রেণিতে কামিল পাশ করে সরকারি বিধি মোতাবেক চাকুরী নিয়েছেন। বেসরকারি নিয়োগ-যোগদান একই যোগ্যতায়। সরকারি নিয়োগ যোগদানও কামিল পাশ দিয়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সব জায়গায় ১০ম গ্রেডে তাকে বলবৎ রাখা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে উনার বিএড করা নেই বলে উনার নাম ৭ নম্বর সিরিয়াল থেকে ১৮ নম্বর সিরিয়ালে অবনমন করা হয়েছে। এ বিষয়ে মোহাম্মদ আহসান উল্লাহর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এক যুগের বেশি সময় ধরে এখানে চাকুরী করতেছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের অধীনে কাজ করেছি। কেউ আমার নাম নিচে নামাননি। তারা কি তাহলে সরকারি বিধি অমান্য করেছেন? তিনি আরও বলেন, সব দিক বিবেচনায় বিধি সম্মত হওয়ায় আমার নাম হাজিরা খাতায় ৭ নম্বরে রাখা হয়েছিল। আমার সম্মান রক্ষার্থে পূর্বের জায়গায় আমার নাম বহাল রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠান মডেলে রুপান্তর করা থেকে জাতীয়করণ পর্যন্ত প্রতিটি ইট, বালু সিমেন্টের সাথে আমার শ্রম, অর্থ, সময় জড়িত। এমনকি আমার জীবন-যৌবন , মেধা সব কিছুই অত্র প্রতিষ্ঠানর স্বার্থে ব্যয় করেছি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তো আমার বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। আমার সাথে পরামর্শ না করেই প্রতিহিংসা বশত: আমার সম্মান হানি করেছেন তিনি। কারণ উনি তো প্রধান ও সহকারী প্রধান কোনটিই নন।
উনার কাছে হাজিরা খাতায় হাত দেওয়ার ব্যাপারে উপর থেকে কোন নির্দেশনাই আসেনি। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আমার উপর উনি বেইনসাফ করেছেন। উনার সরাসরি নিয়োগ বিধানের সাথে আত্তীকরণকৃত শিক্ষক-কর্মচারির নিয়োগ বিধান উনি গুলিয়ে ফেলেছেন।
আমিই একমাত্র ব্যক্তি যার পুলিশি তদন্ত একই সময়ে ০৩ জেলায় করা হয়েছে। উনি আমাকে হেয় করার উদ্দেশ্য এও বলেন যে, আপনার কামিলের সার্টিফিকেটটি মাস্টার্স সমমানের নই! উনি কে? যিনি আমার সার্টিফিকেটের মান নির্ধারণ করবেন? আমার চাকুরী বিধান আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চাকুরি বিধান সম্পূর্ণভাবে আলাদা! উনি তালগোল পাকিয়ে উনার সরাসরি নিয়োগ বিধানের বিধিমালা আত্তীকরণকৃত শিক্ষকদের প্রতি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে চাপিয়ে দিয়েছেন!
যা কোনো ভাবেই বিধি সম্মত নয়! আমার ১০ বছর পরে এমপিও ও বিএড স্কেল পাওয়া শিক্ষক কি করে হাজিরা খাতায় আমার নামের আগে বিএডের দোহাই দিয়ে চলে আসে? বেসরকারি ও সরকারি আমল মিলিয়ে ১৭+ বছর চাকুরীরত অবস্থায় কোথাও আমাকে আমার চাকুরি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ আমাকে বিএডের শর্ত দেননি!আমার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নিকট সবিনয়ে জানতে চাই আমার চাকুরি স্হায়ীকরন ও নিয়মিত করনের আগে উনি কি করে হাজিরা খাতায় হাত দিলেন?
এ বিষয়ে ফুলপুর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) এ. কে. এম. আজাদের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। উনি নয় শুধু কারো সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। সরকারি বিধি অনুযায়ী আমি এটা করেছি। আগে উনার নাম যারা ৭ নম্বর সিরিয়ালে লিখেছেন তারা কি তাহলে ভুল করেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা এ নিয়মটা জানেন না। তারা এটা ভুলই করেছেন। এজন্য আমি তো আর ভুল করতে পারি না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলপুর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ আকরাম হোসেন বলেন, সাবেক প্রধান শিক্ষক মোজাহারুল ইসলাম স্যারের আমলে শিক্ষকদের নাম যে প্যাটার্নে লেখা হয়েছে আমরাও সে প্যাটার্ন অনুযায়ী লিখে গেছি। এখন প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের পর যদি প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়ে থাকে তাহলে সে অনুযায়ী লেখা হবে। এতে তো কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলপুর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম সীমা বলেন, বিষয়টি সুরাহার জন্য আমি ডেকেছিলাম। সেদিন আবেদনকারী আসেননি। উনি কুমিল্লায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন। আবার ডাকবো উভয়পক্ষকে। ডেকে সরকারি বিধি মোতাবেক বিষয়টি সুরাহা করা হবে।