আজ
|| ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
বড়সভা ও কিছু কথা
প্রকাশের তারিখঃ ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ রুশাইদ
জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়ার বার্ষিক মাহফিল বহুবছর ধরে 'বড় সভা' নামে চলে আসছে।
বাস্তবিক অর্থেই বালিয়ার মাহফিলের জন্য 'বড় সভা' নামটা যথার্থও বটে। প্রতি বছর বালিয়া মাদরাসার মাহফিলে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হয়।
তাই বালিয়া মাদরাসার বার্ষিক সভার জন্য 'বড়' শব্দটা বস্তুনিষ্ঠ। এতে অতিরঞ্জনের কিছু নেই। বৃহত্তর মোমেনশাহীতে 'বড় সভা' বলতে বালিয়া মাদরাসার সভাকেই বোঝানো হয়।
কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, কোন কোন মাহফিলে সাকুল্যে পাঁচশো লোক হয় না অথচ তারাও মাহফিলের নাম দেয় 'বড় সভা'। এমন মাহফিলকেও 'বড় সভা' নামকরণ করতে দেখেছি যার পুরো পেন্ডেলে বালিয়া মাদরাসার সভার স্টেজের সমপরিমাণও লোক হয় না! এটা 'বড়' শব্দের অপপ্রয়োগ বলা যায়।
কিন্তু কী করা? আমারা তো পরিমিত শব্দ প্রয়োগে অভ্যস্ত নই। তাই যে শব্দকেই গ্রহণ করি তার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ি ।আমাদের সমাজে এর অনেক উদাহরণ রয়েছে।
তাই যত্রতত্র 'বড় সভার' অপপ্রয়োগের কারণে বালিয়া মাদরাসার সভার (সকল দিকসহ) নামেও ভিন্নতা ধরে রাখতে জামিয়ার বর্তমান মুহতামিম মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিন দামাত বারাকাতুহুম মজলিসে শুরার অনুমোদনে পোস্টারে 'বড় সভা'র আগে 'আজিমুশ্বান' শব্দটা বৃদ্ধি করেছেন।
'আজিমুশ্বান' শব্দ বৃদ্ধি করে তিনি কোন ভুল কাজ করেননি। কারণ,
এক.
'বড় সভা' নামটা আসমান থেকে অবতীর্ণ হওয়া অকাট্য বিধান সম্বলিত কোন পরিভাষা নয় যা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যাবে না।
দুই.
যামানার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিশেষ কোনো চিন্তার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন নাম ও পরিভাষাগুলো পরিবর্তন করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এর দৃষ্টান্ত রয়েছে। এমনকি বালিয়া মাদরাসাতেই এর উদাহরণ রয়েছে।
যেমন:
ক.
বালিয়া মাদরাসায় পূর্ববর্তী সময়ে
শিক্ষাবিষয়ক প্রধানকে 'সদর' বলা হতো।
শাইখুল হাদিস মাওলানা লোকমান আলী (রহ.) ছিলেন বালিয়া মাদরাসার শিক্ষাবিষয়ক প্রধান। তাই তাঁকে 'সদর সাহেব' নামে ডাকা হতো। (উদ্দেশ্য: সদরুল মুদাররিসীন। তিনিই শিক্ষা বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করতেন।)
কিন্তু যখন হযরত মাওলানা গিয়াছ উদ্দিন শায়খে বালিয়া রহ. শিক্ষাবিষয়ক প্রধান হলেন তখন তিনি 'সদর' শব্দ পরিবর্তন করে ব্যবহার করলেন 'নাযেমে তালীমাত'।
(সূত্র:জামিয়ার প্রাচীন শিক্ষক হাজিরা খাতা এবং জামিয়ার প্রবীণ উস্তাযগণ)
খ.
প্রাচীনকালে বালিয়া মাদরাসার পরিচালককে 'নাযেম' নামে ডাকা হতো। মাওলানা দৌলত আলী রহ.প্রায় চল্লিশ বছর বালিয়া মাদরাসার পরিচালক ছিলেন। তাই তিনি 'নাযেম সাহেব হুজুর' নামে পরিচিত হোন। তাঁকে সবাই 'নাযেম সাহেব হুজুর' নামে চিনে।
কিন্তু যখন শায়খে বালিয়া মাওলানা গিয়াছ উদ্দিন (রহ.) বালিয়া মাদরাসার পরিচালক হন তখন তিনি সেই নাম পরিবর্তন করে 'মুহতামিম' শব্দের ব্যবহার শুরু করেন। এই 'মুহতামিম' শব্দের ব্যবহারটাকেই তিনি সময়ের প্রয়োজনে অধিক সমীচিন মনে করেছিলেন।
(সূত্র: ১৯৮১ সালের শিক্ষক হাজিরা খাতা এবং জামিয়ার প্রবীণ উস্তাযগণ)
ওই সময় থেকেই বালিয়া মাদরাসায় নাযেম' শব্দের পরিবর্তে 'মুহতামিম' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
তিন.
বালিয়া মাদরাসার মাহফিলের জন্য ব্যবহৃত 'বড় সভা' নামটাও আগে ছিলো না বরং 'বড় সভা' নামকরণের আগে বালিয়ার মাহফিল 'বিরাট ধর্মসভা' নামে প্রচারিত হয়েছে।
বালিয়ার মাহফিলের ১৯৫৮ সালের ২৩ জুনের একটি লিফলেটে লেখা আছে 'বিরাট ধর্মসভা' তখন জামিয়ার পরিচালক ছিলেন মাওলানা দৌলত আলী রহ.।
সুতরাং সময়ের প্রয়োজনে বালিয়া মাদরাসার ওই সময়ের দায়িত্বশীলরা মাহফিলের পোস্টারে 'বিরাট ধর্মসভা' শব্দটা পরিবর্তন করে 'বড় সভা' শব্দ যুক্ত করেছিলেন। তাই মাদরাসার বর্তমান দায়িত্বশীলগণ কোন প্রয়োজনে মাদরাসার পোস্টারে আগের নাম ঠিক রেখে শুধু একটি শব্দ 'আজিমুশ্বান' বৃদ্ধি করেছেন। এতে দোষের কী আছে?
চার.
একটি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনকে সফল করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন। পোস্টারটাও এরই একটা ক্ষুদ্র অংশবিশেষ। সেই পোস্টারে বড় সভা/ বিরাট ধর্মসভা/ ইসলামী সম্মেলন/ ইসলামী কনফারেন্স/ সেমিনার এ জাতীয় শব্দের যেকোন একটি লেখা যায়।
আয়োজকরা কোন শব্দ ব্যবহার করবেন? এটা তাদের রুচি ও অভিরুচির বিষয়। তবে সুন্দর কোন প্রস্তাব থাকলে আমরা সেটা তাদেরকে জানাতে পারি কিন্তু সমালোচনা করতে পারি না। বাহির থেকে এটা কেন লেখা হলো? ওটা কেন লেখা হয়নি? এগুলো লেখা/ বলা অহেতুক প্রলাপ ছাড়া কিছু নয়।
বি.দ্র.
এটা আলোচনার কোন বিষয়ই ছিলো না। কিন্তু কথা আছে 'যারে দেখতে না'রি তার চলন বাঁকা' এই মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে কিছু লোক এ বিষয়ে অহেতুক আপত্তি উঠিয়েছেন। তাই কিছু প্রিয় মানুষের আবেদনে কথাগুলো লিখতে হলো। ২৬ জানুয়ারি বালিয়ার বড়সভায় আপনারা সবাই আমন্ত্রিত। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে করণীয় কাজ করার ও বর্জনীয় কাজ ত্যাগ করার তাওফীক দান করুক, আমীন।
লেখক :
মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলূম বালিয়া, ফুলপুর।
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশ নিউজ. All rights reserved.