আজ
|| ১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
বহুল আলোচিত মায়াবী শিশুকন্যা আছিয়ার মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটন
প্রকাশের তারিখঃ ১৮ মার্চ, ২০২৫
অনলাইন ডেস্ক :
বহুল আলোচিত মাগুরার মায়াবী শিশুকন্যা আছিয়ার মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যা পড়লে চোখের পানি ধরে রাখা যাবে না।
আছিয়ার বড় বোন আফিয়াকে এক মহিলা বললেন, আমি সবটা জানি। ওই রাতে কি ঘটেছিল? শুধু সে রাতে নয় বরং প্রতি রাতে কি ঘটেছে তোমার শশুর বাড়িতে সবই আমি জানি।ওইসব কথা আমি বলবো নাকি তুমি নিজেই বলবে?
একথা বলার পর আফিয়া বসে পরে। অপরাজিতার পায়ে ধরে বলে, আপা কিছু বইলেন না। আমার ছোট বোনের জীবন তো গেছেই, শেষ পর্যন্ত আমারডাও যাইবো। আমার জীবন নষ্টটা কইরেন না।
উৎসুক জনতা অবাক হয়ে তাকিয়েছিল। হঠাৎ একি কথা! আফিয়া পল্টি খেয়ে গেল!
তার দিকটা একবার দেখে নিল অপরাজিতা। তারপর আফিয়ার দুই কাঁধে হাত রেখে বলে, দুর পাগলী। তোমার কিছুই হবে না।
ধর্ষকরা তো ধরা পড়েছে। তাছাড়া যারা অপরাধ করেছে তাদের দোষ। তুমি অকারণে ভয় পাচ্ছো কেন? আমি, আমরা সবাই, পুরো দেশবাসী তোমার পাশে আছি। তোমার সাথে থাকবো। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছড়বো না। এবার ওড়না দিয়ে মুখ লুকিয়ে রাখে আফিয়া। অপরাজিতা আফিয়ার মুখ থেকে ওড়না সরিয়ে দিয়ে বলে, তুমি চাও না আছিয়া সঠিক বিচার পাক? অপরাধীরা শাস্তি পাক? আফিয়া বলে, জী আপা চাই। তাহলে মুখ খোল। সত্য কথা বলে দাও। সবাই জানুক সত্য ঘটনা। এবার আফিয়া ক্যামেরার দিকে তাকালো। সাংবাদিকরাও তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আফিয়া কিছু বলতে পারছিল না। দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। অপরাজিতা বলে, কাঁদো। কেঁদে কেঁদে হাল্কা হও। নিজের মধ্যে সাহস ফিরিয়ে আনো। শক্ত হয়ে দাঁড়াও। মুষ্টিবদ্ধ হাত উপরে উঠাও। চিৎকার করে বলো, আমি মানুষ। আমারও আছে ভালোভাবে বাঁচার অধিকার। আফিয়া ওড়নার আঁচলে মুখ মুছে নেয়। তারপর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। সাংবাদিক ভাইদের বলে, শুনুন, আমার ও আমার ছোট বোনের সাথে কি ঘটেছিল সেই রাতে।
আফিয়া নির্ভয়ে বলে, আমি আফিয়া। বাবা মায়ের প্রথম কন্যা সন্তান। অভাবের সংসার আমাদের। তাই পড়াশোনা করা হয়নি। একটি ভালো সম্বন্ধ আসায় অল্প বয়সে মা বাবা আমাকে বিয়ে দেয়। আমি প্রথমে বিয়ে করতে রাজি হইনি। সবাই আমাকে বোঝায় যে, অভাবের সংসারে একজন খাওয়ার মানুষ কমলে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে। ছোট ভাই বোনেরা একটু ভালো খেতে পারবে। এজন্য আমি রাজি হয়েছি।
বিয়ের প্রথম দিন থেকেই আমার শশুরের কুনজর বুঝতে পারছি। রাতে বিছানায় স্বামী ব্যবহারের পর আমাকে পোশাক পরতে না দিয়ে রুমের বাহিরে যায়। তারপর অন্ধকারে আমার শরীরের উপর কারো উপস্থিতি বুঝতে পারছি। এটাও খেয়াল করি এখন যে আসছে সে আমার স্বামী না। অন্য পুরুষ। কিন্তু কে? তা বুঝতে পারছি না। আমার ছোট শরীর। স্বামীকে সহ্য করাই অসম্ভব। তারপর আরেকজন! আমি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠি। চিৎকার করার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার মুখ চেপে ধরা হয়। ফিসফিস করে আমাকে চুপ করতে বলে। মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি এবার কন্ঠ চিনতে পারি। এ কন্ঠ আমার শশুরের কন্ঠ। তারপর সে ছেড়ে চলে গেলে আবার আরেকজন আসে। একেও চিনতে পারি। সে হচ্ছে আমার দেবর। এরপর আমার স্বামী ভিতরে আসে। তাকে বিষয়টি জানালে, সে রেগে যায়। বলে, সে ছাড়া ঘরে আর কেউ আসেনি।
পরের দিন শাশুড়িকে জানালে বলে, আমি স্বপ্ন দেখেছি। এভাবে প্রতি রাতেই আমার স্বামী, শশুর ও দেবর আমাকে ধর্ষণ করে। আমি স্বামীকে বললে মারধর করে। আর শাশুড়িকে বললে বলে, ভুতের আছর আছে। ভুত প্রতি রাতে আসে আমার কাছে। তারপর বাড়িতে আসলে মাকে জানাই বিষয়টি। মা বিষয়টি বিশ্বাস করেনি। ভেবেছে, মেয়ের বয়স কম তাই স্বামীর কাছে যেতে ভয় পায়। তাই সান্ত্বনা দেয়। সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এরপরও আছিয়ার বড় বোন শশুর বাড়িতে যেতে চাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় ছোট বোন আছিয়াকে সাথে পাঠানো হয়।
এরপর আছিয়াকে সাথে নিয়ে আফিয়া তার স্বামীর বাড়িতে যায়। কিন্তু আছিয়াকে রাতে তার সাথে না রেখে শাশুড়ির সাথে রাখতে চায়। কিন্তু আফিয়া এতে রাজি হয়নি। তার সাথেই রাখে।
আছিয়া পাশে থাকা অবস্থায় আফিয়ার স্বামী আগের রাতের মত একইভাবে আমার স্বামীর দরজা খুলে বাথরুমে যায়। তারপর আফিয়ার শশুর ঘরে আসে। আফিয়া ভাবলো যে বিষয়টি স্বামীকে দেখাতে হবে, এটা ভুত নাকি তার বাপ। এটা ভেবে সে আছিয়াকে পা দিয়ে ধাক্কা দেয়। কয়েকবার ধাক্কা দেওয়ার পর আছিয়া জেগে ওঠে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারে। সে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেয়। লাইট জ্বালানোর সাথে সাথেই আফিয়ার শশুরকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পায় আছিয়া। এসময় সে বলে, তালোই আপনি এ ঘরে কেন? আর এ অবস্থায় কেন?
তখন শশুর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আফিয়ার স্বামী ঘরে আসে। পরে এ নিয়ে তাদের মাঝে ঝগড়া হয়। আফিয়ার স্বামী আফিয়াকে মারধর করে এবং নিষেধ করে দেয় যে, একথা যেন কেউ না জানে। এসময় আছিয়া বলে, আমি আব্বা আম্মার কাছে সব বলে দিব। এটাই ছিল আছিয়ার অপরাধ। এদিকে, মারামারির শব্দ শুনতে পেয়ে আশপাশের লোকজন চলে আসে। তখন আছিয়াকে একটি ঘরে আটকে রাখে। এমনকি তার হাত পা ও মুখ বেঁধে রেখে। কাউকে বুঝতে দেয় না আছিয়াার কথা। আর আফিয়াকে বলে যে, এরে ভুতে ধরছে। তাই স্বামীকে সন্দেহ করে। লোকজনও তাই বিশ্বাস করে। ততক্ষণে সকাল হয়ে যায়।
এদিকে, আফিয়ার শশুর বুঝতে পারে যে, আছিয়া বাড়িতে ফিরে সব বলে দিবে। তাই সে টেনশানে পড়ে গেল। তার কথা হলো, আছিয়াকে বিষয়টি বলতে দেওয়া যাবে না। তাই তাকে আটকে রাখে এবং রাতের অপেক্ষা করতে থাকে।
রাত হওয়ার পর লোকজন ঘুমিয়ে পড়লে গভীর রাতে আছিয়াকে ধর্ষণ করতে যায়।
আছিয়াকে কতটা নির্মমভাবে ধর্ষণ করা হযেছিল সে বিষয়ে চিকিৎসারত ডাক্তার বলেছেন, আছিয়া যেহেতু বাচ্চা মেয়ে তাই তার গোপনাঙ্গের ডেপথ খুবই ছোট।
সেজন্যে ধর্ষকরা কিছুটা ধারালো ব্লেড বা কাঠি দিয়ে ওর গোপনাঙ্গে ছিদ্র করার চেষ্টা করেছিল। সে ছিদ্রটা ছিল আনুমানিক ৫ সে.মি. গভীর।
তারপর গোপনাঙ্গের একদম ভিতরের দিকে অনেকগুলো স্ক্রেচ করা হয় এবং সেটা করা হয় একদম সূক্ষ্মভাবে। অনেকটা সময় নিয়ে।
একাজ করার সময় তার নাক-মুখ চেপে ধরা হয়েছিল আছিয়ার। যাতে কোনরকম চিৎকার করতে না পারে। তারপর মানুষ চলে আসার আওয়াজ পেয়ে আরেকজন গলা চেপে ধরেছিল মেরে ফেলার জন্যে। আর এজন্যেই অক্সিজেনের অভাবে অজ্ঞান হয়ে পড়ে মেয়েটা। মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল তখন।
এ নির্মম বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কণ্ঠস্বর কাঁপছিল ডাক্তারের। তিনি বলছিলেন, 'এরকম কন্ডিশনে ভিক্টিম স্পটেই মারা যায়। এ মেয়েটা যে এখনও বেঁচে আছে এতেই অবাক হচ্ছি আমি।'
তাহলে অনুমান করা যায় যে, কতটা অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছিল শিশুকন্যা আছিয়াকে। ৫ মার্চ আছিয়া তার বোনের বাড়ি মাগুরার পারনান্দুলিয়ায় যায়। ৬ মার্চে ঘটনা ঘটে। প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সবশেষে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৩ মার্চ আছিয়া মারা যায়। কেঁপে ওঠে পৃথিবী। প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্টজনেরা আছিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে তার লাশ নিজ গ্রাম মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সোনাকুন্ডিতে পৌঁছে দেওয়া হয়। মাগুরার নোমানী ময়দানে সন্ধ্যা ৭টায় ও সোনাকুন্ডি সম্মিলিত ঈদগাহ মাঠে জানাজাশেষে ঈদগাহ সংলগ্ন গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে সকল মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আছিয়ার মা বাদি হয়ে মামলা হয়েছে। পরে আসামি আফিয়ার স্বামী সজিব হোসেন (১৮), শ্বশুর হিটু মিয়া (৫০), দেবর রাতুল শেখ (১৭) ও শ্বাশুড়ি জাবেদা বেগম (৪০)-কে আটক করা হয়েছে। বিচার কার্য প্রক্রিয়াধীন। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ মামলা সম্পন্ন করবেন বলে জানা গেছে। সারা দেশ থেকে সবাই এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। আমরাও আছিয়া হত্যার উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। যাতে আর কোন পাষণ্ড এ ধরনের পাশবিক কাজ করার সাহস না পায়।
* তথ্য ও ছবি অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশ নিউজ. All rights reserved.